ভবদহের স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে লাগাতার কর্মসূচির ঘোষণা
ভবদহ এলাকার স্থায়ী জলাবদ্ধতার সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরার লক্ষে আজ ১২ ডিসেম্বর ( রবিবার) দুপুর ১২ ঘটিকায় যশোরের নীল রতন ধর রোডে অবস্থিত ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভবদহ এলাকার জীবন ও জীবিকা নিয়ে আন্দোলনকারী ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রনজিত বাওয়ালী।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, যুগ্মআহ্বায়ক গাজী আব্দুল হামিদ, সদস্য সচিব চৈতন্য কুমার পাল, শিবপদ বিশ্বাস, কার্তিক বকসি, ইলিয়াস, রাজু আহমেদ, হোসেন, পলাশ মোল্যা, উত্তম গাইন, জিল্লুর রহমান ভিটু, গৌর চন্দ্র রায়সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
লিখিত বক্তব্যে আহবায়ক জানান,দীর্ঘদিন ধরে আমডাঙ্গা খাল খনন,বিল কপালিয়াসহ দূর্গত এলাকার বিলগুলোতে পর্যায়ক্রমে টিআরএম চালু,নদীর নাব্যতা রক্ষা ও জলাবদ্ধতা অবসানে উজানে পদ্মা- মাথাভাঙা – ভৈরব নদীর সংযোগের সাথে মুক্তেশ্বরী নদীকে যুক্ত করে নদী প্রবাহমান করা যা বাস্তবতঃ সম্ভব হলেও ২০১৩ সাল থেকে অদ্যাবধি প্রতিশ্রুতি ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের মাধ্যমে শুধু অত্র এলাকার জনগনই শুধু নয় স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা “ নদী বাঁচলে, বাঁচতে দেশ”- এই স্লোগানকেও অগ্রাহ্য করার সামিল।
ফলে অত্র এলাকার সকল নদনদী নাব্যতা হারিয়েছে এবং ভবদহ নামক স্লুইসগেট থেকে মোহনা পর্যন্ত ৬০/৭০ কিলোমিটার নদী ভরাট হয়ে পানি বের হওয়ার পথ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।
উল্লেখিত পরিণতির কথা বার বার বলা সত্ত্বেও পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়,স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রী, আমলারা কর্ণপাত না করায় গত ১৫ নভেম্বর-২০২১ সোমবার সকাল ১১ ঘটিকায় ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বানে দূর্গত এলাকার ৫ শতাধিক নারী-পুরুষ দক্ষিণ-অঞ্চলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড ভবদহ স্লুইসগেটের সামনে নাম মাত্র একটা স্কেভেটর প্রেরণ করেন। যা জলাবদ্ধ এলাকার লোকের সাথে প্রহসনের নামান্তর। পানি উন্নয়ন বোর্ড, নির্বাহী প্রকৌশলীসহ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বরাবরই সরকারকে ভুল বুঝাচ্ছেন যে, সেচপাম্প চালু হওয়ার ফলে জলাবদ্ধতা দূর হয়ে মাঠে ফসল ফলছে, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, স্কুল-কলেজের কোথাও পানি ওঠেনি। বস্তুতঃ কয়েক লক্ষাধিক বিঘা জমিতে ফসল হয়নি। রাস্তাঘাট,ঘরবাড়ি, স্কুলকলেজসহ সরকারি বেসরকারি অবকাঠামো নষ্ট হয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার অবকাঠামো নষ্ট হয়েছে এবং এলাকার জনগণের জীবনমান বিপন্ন হয়েছে। এমনকি স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে ১ শিশুসহ ৪ জন পানিতে ডুবে মারা গেছে যার দায়ভার সরকার এড়াতে পারেন না।
এমতাবস্থায় ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি – প্রস্তাবিত সেচ প্রকল্প বাতিল,স্লুইসগেটের সামনে পাইলট চ্যানেল করার জন্য ৫/৬ টি স্কেভেটর লাগানো এবং ২১,৯ ও ৮ ভেন্টের গেটসমূহ উঠানামার ব্যবস্থা করা, ক্রাস প্রোগ্রামে মাঘী পূর্ণিমার আগেই বিল কপালিয়ায় টিআরএম চালু করা,ক্ষতিগ্রস্ত ভবদহ জনপদের ফসল,মাছ,ঘরবাড়ি, স্কুলকলেজসহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও কৃষিঋণ মওকুফ করা,আমডাঙ্গা খাল সংস্কার কাজে প্রিওয়ার্ক ও পোস্ট ওয়ার্ক জনসমক্ষে টানানো ও কাজের সচ্ছলতা নিরূপণে আন্দোলনকারী সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে তদারক কমিটি গঠন করা ও সরকারকে মিথ্যা তথ্য প্রদান,নদী হত্যা,জনপদের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দ্দশা, ফসল,বসতবাড়ি ও মালামালের ক্ষয়ক্ষতির সাথে জড়িত পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখিত দাবিসমূহ পূর্নবিবেচনার দাবি করেন আর তা না হলে ভবিষ্যতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিসহ বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন।
No comments
please do not enter any spam link in the comment box.