খুলনার খবর২৪|| সন্তানের পিতার পরিচয় দিতে পারবে না, সমাজের মানুষ নানা কথা বলবে এসব ভেবে সদ্যজাত সন্তানকে ফেলে পালিয়ে যান মা।তবে অনুতপ্ত হয়ে ফেলে যাওয়া সেই সন্তানের কাছে ফিরেছেন সেই মা।
গতকাল মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমানের আদেশে সন্তানকে ফিরে পান তিনি। গত ১৯ দিন আগে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে ঘটে এমন নির্দয় ঘটনা।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা ইউনিয়নের হাড়দ্দহ গ্রামের নুরনাহার হীরা। তিন বছর আগে স্বামী নুরনাহারকে ছেড়ে ভারতে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। বাবা আব্দুর রশীদ ভ্যান চালান দেবহাটা উপজেলার পূর্ব কুলিয়া এলাকায়।অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন নুরনাহার হীরা।তার গর্ভে জন্ম নেয় একটি ছেলে সন্তান। গত ২১ জানুয়ারি সকালে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গ্যারেজের পাশে একটি কম্বলের মধ্যে জড়িয়ে সন্তানটিকে ফেলে যায় নুরজাহান। এরপর থেকে শিশুটি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঘটনাটি লিখিতভাবে সমাজসেবা অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদিকে, বাচ্চাটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য সাতক্ষীরা শিশু আদালতে আবেদন করেন শিশুটির মাসহ পাঁচ দম্পত্তি।
বাচ্চাটির মা নুরনাহার হীরা জানান, আমি নিজের সন্তানকে ফেলে চলে গিয়েছিলাম, আমি অনুতপ্ত লজ্জিত। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।সন্তানকে ফিরে পেতে আমি উকিলের কাছে গিয়েছিলাম। আদালতের বিচারক আমাকে আমার সন্তান ফিরিয়ে দিয়েছে। সন্তানকে তার বাবার পরিচয় দিতে পারবো না, সমাজের মানুষ নানা কথা বলবে এটা ভেবে আমি সন্তানকে ফেলে গিয়েছিলাম। আমি আমার সন্তানকে মানুষ করবো।তাকে আমি লালন পালন করবো।তাকে যে যাই বলুক।
নুরনাহার হীরার আইনজীবী অ্যাড.শাহনয়াজ পারভীন মিলি জানান, বাচ্চাটি ফেলে যাওয়ার পর মা হিরা অনুতপ্ত হন আবারও নিজের সন্তানকে কাছে পেতে চান। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাচ্চাটি দেয়নি যেহেতু ঘটনাটি তারা আগেই আদালতকে অবহিত করেছেন। এরপর বাচ্চাটির মা নুরনাহার হীরা ও চার নিঃসন্তান দম্পত্তি বাচ্চাটিকে নিজের কাছে নিতে আবেদন করেন। আদালত যাচাই বাছাই করে আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনায় বিচারক উল্লেখ করেছেন, মায়ের কাছে সন্তানকে প্রদান করাই সমীচীন এবং সর্বোত্তম বিকল্প।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. শামসুর রহমান জানান, বাচ্চাটিকে আমরা নিজের মত করে দেখাশোনা করছি। আমি নিজেই তার পেছনে ১০ হাজার টাকা খরচ করেছি। তাছাড়া হাসপাতালের স্টাফ, নার্সরাও করেছেন। সকলেই সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন বাচ্চাটিকে সুস্থ ও ভালো রাখতে। বাচ্চাটির অবস্থা এখন ভালো রয়েছে হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আদালতের নির্দেশনায় বাচ্চাটিকে তার মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
No comments
please do not enter any spam link in the comment box.