নওয়াপাড়ায় আধুনিক পদ্ধতিতে সার প্যাকিং ও লোডিং চালু করেছে ‘নওয়াপাড়া গ্রুপ’
বিদেশী জাহাজ মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়া পর্যন্ত পৌছাতে পারে। এখানে এসে নোঙর করতে বাধ্য হয়। কারণ নদীর গভীরতা কম থাকায় সাগর ছেড়ে নদীতে আসতে পারেনা বড় বড় ওই সব বিদেশী জাহাজগুলি। সেখান থেকে কার্গো জাহাজের মাধ্যমে খুলনা ও নওয়াপাড়ায় আনা হয় ওই সব সার। যা দেশের কৃষিপণ্য উৎপাদনের অন্যতম রাসায়নিক পদার্থ। মোংলা থেকে নওয়াপাড়ায় আসা ওইসব কার্গো থেকে সার আনলোড করা হয়।
আনলোড করতে প্রচুর পরিমাণ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। শ্রমিকরা খুব ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাতে হাতে বস্তা ভর্তি করে, সেলাই দিয়ে নদীর মধ্যে অবস্থান করা জাহাজ থেকে চিকন সিড়ি বেয়ে ৫০ কেজি ওজনের ওই সব সার বোঝাই বস্তা মাথায় করে নদী পাড়ের খোলা জায়গা অর্থাৎ ড্যাম্পি করা হত। সেখান থেকে ওই সারের বস্তা গাড়িতে করে নিজস্ব গোডাউনে রেখে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পন্য পরিবহনের মাধ্যমে সরকারী বাফার গুদামে পৌছে দেয়া হত ওইসব সার। সেখান থেকে ডিলার কিংবা সাব ডিলারগণের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশের কৃষকদের হাতে। ৮০’র দশক থেকে এভাবেই চলে আসছিল সার লোড-আনলোডিং কর্মকান্ড।
এতে একদিকে প্রচুর পরিমাণ শ্রমিক কাজ করেও সঠিক সময় কার্গো খালি করা কিংবা সঠিক সময়ে সার বাফার গুদামে পৌছানো ছিল অনেক কষ্টসাধ্য। কখনও কখনও কার্গো ড্যামারেজের কারণে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হতেন আমদানি কারক প্রতিষ্ঠানগুলি। তাছাড়া আবহাওয়া অনুকূলে না থাকা, অতিবৃষ্টি, ঝড়-বাসাতসহ বিভিন্ন কারণে সময় ক্ষেপন হত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই কর্মকান্ড শেষ করতে। এরকম নানা হুমকির কথা চিন্তা করে কিভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে স্বল্প সময়ে জাহাজ থেকে সার আনলোডিং, প্যাকেটিং ও পণ্যপরিবনহ অর্থাৎ ট্রাকে লোড করা যায় তা ভাবতে থাকেন দেশের খ্যাতনামা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ফাইজুর রহমান বকুল ও এমডি সাইদুর রহমান লিটু। দেশ-বিদেশ ঘুরতে থাকেন এই চিন্তা মাথায় নিয়ে।
দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশকে ডিজিটালাইজেশন করার পাশাপাশি দীর্ঘ সময়ের কাজ কিভাবে স্বল্প সময়ে সম্পন্ন করা যায় এবং সহজলভ্য করতে বিভিন্ন দেশের ডিজিটাল পদ্ধতি নিজের দেশে স্থাপন করতে ও দেশকে ডিজিটালাইজেশন করার সহযোগীতার আশ্বাস দেন। এবং উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহযোগীতার প্রতিশ্রুতি ঘোষনা করেন। সেই ঘোষনাকে বাস্তবায়ন করে সরকারকে সহযোগীতা করতে নওয়াপাড়া গ্রুপ নিজেদের এসকল কর্মকান্ড ডিজিটাল সিস্টেমের মাধ্যমে সম্পন্ন করার এই উদ্যোগ গ্রহন করেন।
নিজেদের বিভিন্ন ঘাটে স্থাপন করেন এধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি। যার মাধ্যমে অতিদ্রুত জাহাজ থেকে মালামাল আনলোড হয়ে অটোমেটিকভাবে প্যাকার মেশিনের মাধ্যমে প্যাকিং হয়ে সংক্রিয়ভাবে ট্রাক লোড হচ্ছে। মঙ্গলবার নওয়াপাড়া গ্রুপের নিজঘাট-৩ তে গিয়ে দেখা যায়, ভৈরব নদীতে নোঙর করা বড় বড় কার্গো থেকে জেটির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের যেমন ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি, এমওপি খোলা সার অটোমেটিকভাবে প্যাকার মেশিনের উপরের বড় ধরনের হাউজের মধ্যে পড়ছে। সেখান থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ওজন হয়ে মেশিনের মুখে থাকা বস্তাভর্তি হয়ে এবং তারপর সেলাই শেষে অটোভাবে ট্রাকের উপর গিয়ে পড়ছে। আর শ্রমিকরা সেগুলি সাজিয়ে সাজিয়ে ট্রাক লোড করছে।
খুব দ্রুত সময়ে এই ট্রাক লোডিং হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। যা রাতদিন ২৪ ঘন্টা ৩ শিফটে বিরতিহীনভাবে চলছে এই কর্মকান্ড। যে কারণে অল্প সময়ে অতিদ্রুত নির্দিষ্টস্থানে পৌছে যাচ্ছে কৃষকে হাতে।
এব্যাপারে নওয়াপাড়া ট্রেডার্সের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জনি জানান, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সার আনলোডিং ও প্যাকিং হয়ে ট্রাকলোড করে স্বল্প সময়ে আমরা সারাদেশের বাফারগুদামে সকল প্রকার সার সঠিক সময়ে পৌছে দিচ্ছি। যে কারণে সারের কোন ঘাটতি হবেনা, দেশের কৃষকেরা সঠিক সময়ে সার পাবে এবং দেশের কৃষি ও খাদ্যপণ্য উৎপাদনে কোন ধরনের বিরুপ প্রভাব পড়বেনা।
No comments
please do not enter any spam link in the comment box.