গ্রাম গন্জের ঐতিহ্য "ঢেঁকি " বিলুপ্তির পথে- খুলনার খবর
মহিদুল ইসলাম (শাহীন) বটিয়াঘাটা খুলনা// গ্রাম বাংলা ঐতিহ্য ঢেঁকি, আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। আগেরকার দিনে গ্রামের প্রতিটা বাড়িতে ছিলো কাঠের তৈরি এ ঢেঁকি। আজ সারা গ্রাম খুজলে একটাও পাওয়া যায় না। ৮০ বছর বয়সী ফুলজাল বিবি বলেন, আমাদের সময় অনেক মহিলা ছিলো যারা এবাড়ি ওবাড়ি ঢেঁকি দিয়ে ধান ভেনে ( চাউল তৈরি)করে সংসার চালাতো আজ সেসব মহিলারা বেকার। তবে ঢেঁকিতে তৈরি চাল বা চালের গুড়া দিয়ে ভাত রান্না বা পিঠা তৈরি করে খাওয়ার মজাটাই আলাদা।
কিছু দিন আগে ঢেঁকির ধুমধাম শব্দ শুনলে মানুষে বুঝতে পারতো, ঐ বাড়িতে নতুন কুটুম বা জামাই মেয়ে এসেছে। তাদের জন্য তৈরি করা হতো রসের পায়েস বা গ্রাম বাংলা শিয়ে পিঠা, রসের পিঠা, কুলি পিঠা, দুধ খেজুর পিঠাসহ বিভিন্ন প্রকার পিঠা তৈরি করা হতো। বিশেষ করে শীত কাল বা পৌষ মাসে জামাই, মেয়ে, ভাগ্নে ভাগ্নি এমনকি ভিন্ন ভিন্ন আত্নীয় স্বজন শহর থেকে ছুটতো গ্রাম বাংলার পিঠা খাওয়ার জন্য। বাড়িতে বাড়িতে বসতো পিঠা তৈরির উৎসব। এসকল উৎসব আজ বিলুপ্তীর পথে তার একমাত্র কারণ ঢেঁকি।
মানবাধিকার কর্মী আশালতা বলেন, ৬৩ ওয়ার্ড এবং ৭ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বটিয়াঘাটা উপজেলা। মাত্র কয়েক বছর আগে জামাই মেয়ে বা নতুন নতুন আত্মীয় স্বজন আসলে পায়েস বা পিঠা তৈরির ধুম পড়তো গ্রামে গ্রামে। এমনকি ঢেঁকির শব্দ শুনলে আমরা বুঝতে পারতাম ঐ বাড়িতে জামাই মেয়ে বা নতুন আত্মীয় স্বজন এসেছে। কিন্তু আজ এসকল ধুমধাম শব্দ বা পিঠা উৎসব হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলা থেকে শুধু ঢেঁকির কারণে।
মরিয়ম ও জবেদা বেগম বলেন, আমরা দুজে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ঢেঁকির মাধ্যমে পা দিয়ে চাল তৈরি করতাম। এক মন ধান ঢেঁকির মাধ্যমে মাড়াই করলে আমাদের দুজনকে ২ কেজি চাল দিতো তবে বর্তমান সময়ের চাল আর আগের দিনের ঢেঁকির তৈরি চাল আকাশ পাতাল ব্যবধান। ঢেঁকি না থাকায় আমরা আজ বেকার।
মেম্বর রুমা বেগম বলেন, আগে পৌষ মাসে আমাদের এলাকায় পিঠা তৈরির হিড়িক পড়তো আজ তা চোখে পড়েনা। আমাদের মা চাচিরা এক সঙ্গে ১০/১২ মন ধান এক সঙ্গে ঢেঁকির মাধ্যমে চাল তৈরি করে রাখতো। ১০/১২মন ধানের চাল তৈরি করতে ২/৩ দিন সময় লাগদো। যারা ঢেঁকির মাধ্যমে চাল তৈরি করে দিতো তাদের দিতে হতো মন প্রতি ২ কেজি। আমাদের সেই ঐতিহ্য 'ঢেঁকি জন্য আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।
No comments
please do not enter any spam link in the comment box.