নওয়াপাড়ায় ভৈরব নদে কার্গো-জাহাজ চলাচলের নীতিমালা উপেক্ষিত: ভ্রাম্যমান আদালতের জরিমানা
নৌ জাহাজ মালিকেরা কোন যেন কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন এই নদীতে চলাচল করে আসছে। ফলে ছোট বড় দুর্ঘটনাও কম হচ্ছেনা। তেমনি নদীর মধ্যে জাহাজ কার্গোর সাথে সংঘর্ষের ঘটনাও হরহামেশা ঘটেই যাচ্ছে। যে কারণে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে চলাচলকারী কার্গো জাহাজে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে।
অভিযান পরিচালনাকালে প্রায় ১৮ লাখ টাকা জরিমানা নির্ধারণ করে তা আদায় করা হয়েছে। এমনকি দুইজনকে কারাদন্ডও দিয়েছে। তবে নওয়াপাড়ায় ভৈরব নদীতে কার্গো জাহাজের মালিকেরা যে পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে সেদিকে কোন নজর নেই নৌপরিবহন অধিদপ্তরের। জাহাজ মালিক ও শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের দাবি, নৌ ফাঁড়ি স্থাপন করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
তবে নৌ ফাঁড়ি হলেও তাদের তেমন কোন কার্যক্রম চোখে পড়ার মত এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি।
বন্দর ব্যবহারীদের দাবির মধ্যে রয়েছে যেমন, নওয়াপাড়া নদী বন্দরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি চিহ্নিত করে সেখানে খুলনা নদী বন্দরের ৪নং ঘারের ন্যায় শীট, পাইলিং অথবা আর সিসি পাইলিং করে গাইড ওয়াল অথবা কি ওয়াল নির্মাণ করলে মালামাল লোড- আন লোডের ব্যবস্থা করা, নদী তীরবর্তী এলাকার উভয় পাড়ে জাহাজ বেধে রাখার জন্য বোলার্ড স্থাপন করা প্রয়োজন, বন্দর সীমানার আওতাভুক্ত ঘাট কিংবা পয়েন্টগুলির সাথে সংযোগ সড়কগুলি সংস্কার করা, নদী তীরের উভয় পাশে সীমানা নির্ধারণ করে পিলার স্থাপন করা প্রয়োজন কেন না জাহাজ বেধে রাখার কারণে চাঁদাবাজদের কবল হতে মুক্তি পাওয়া যায়, বন্দর সীমানায় অবৈধ দখলকারীদের উচ্ছেদ করে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন, যাতে নদীপথে স্বচ্ছভাবে জাহাজ কার্গো চলাচল করতে পারে, নদীর উভয়পাড়ে বিভিন্ন জায়গায় একের অধিক জাগাজ কার্গো বেধে রাখার কারণে নদীপথে দৈনন্দিন নৌযান চলাচলে দুর্ঘটনা ঘটছে।
বন্দর সীমানায় বিভিন্ন জায়গা চিহ্নিত করে ল্যান্ডিং ষ্টেশন করাসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে নৌযান শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসলেও তাদের কোন দাবি পূরনে এগিয়ে আসেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ঘাট মালিকদের নানা জটিলতা রয়েছে যা কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়।
কিন্তু এসব দাবি পূরনে নৌপরিবন মোটেও ভুমিকা রাখছেনা বলেও জানান তারা। গত বৃহস্পতিবার ভৈরব নদে চলাচলকারী নৌজাহাজে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে ১৮ লাখ টাকা জরিমানাসহ দুইজনকে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে। র্যাব-৬ যশোর ক্যাম্প পরিচালিত এ ভ্রাম্যমাণ আদালতে নৌপরিবহন অধিদফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। র্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার মো. নাজিউর রহমান স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) জানান, যশোরের অভয়নগরে ভৈরব নদে চলাচলকারী নৌজাহাজে বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে অভিযান চালানো হয়েছে।
এসময় নৌপরিবহন অধিদফতরের উপসচিব বদরুল হাসান লিটন উপস্থিত ছিলেন। ভৈরব নদে চলমান নৌজাহাজ সমূহ নৌপরিবহন আইন অমান্য করে অতিরিক্ত যাত্রী বহন, জাহাজে পর্যাপ্ত জীবন রক্ষাকারী নিরাপত্তা সামগ্রী না রাখা ও মেয়াদ উত্তীর্ণ অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রাদি ব্যবহার করে জাহাজ চালানোর অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।
নৌপরিবহন অধ্যাদেশ ১৯৭৬ সালের ৩৩, ৫৫, ৬৬ (খ), ৬৭ (খ) ধারায় নওয়াপাড়া সংলগ্ন ভৈরব নদীতে চলাচলকারী ৩৬ নৌ জাহাজের ৩৪ মালিককে ১৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় এবং দুইজনকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। দন্ডিতরা হলো, নাজমুল ইসলাম (৫০), শাহ আলম (৩০), হুমায়ুন কবির (৪৫), শফিকুর রহমান (৪৪), সেলিম (৫০), কাওছার (৫৫), আলমগীর (৩০), আরিফ (৪০), সিরাজুল ইসলাম (৩৫), জাকির (৬০), সোলায়মান (৬০), লিটন শেখ (৪২), সুমন (৩৮), দেলোয়ার হোসেন (২৮), জাহিদ (৪০), ফিরোজ কবির (৩৬), নাঈম শেখ (৩৮), জাহাঙ্গীর আলম (৪৫), জন্নু মোল্যা (৪৮), জুবায়ের (৫২), হৃদয় শেখ (২৮), রুবেল (৩২), রুবেল শেখ (৪০), ইমাম হাসান (৩৬), শরিফুল (৪৫), ইজাজুল হক, আরিফুজ্জামান (৪৫), সোহেল রানা (৫০), রানা হাওলাদার (৩৬), সাব্বির হোসেন (৩৮), সাকিব হাসান (২৮), ফরহাদ (৩০), শেখ আবুল খায়ের (৫৫), জাহিদুল ইসলাম (৪০)। এছাড়া বিনাশ্রমে দন্ডিতরা হলো, শহিদুল ইসলাম (৩০), নির হোসেন (২৮)। দন্ডিতদের যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানি কমান্ডার নাজিউর রহমান।
No comments
please do not enter any spam link in the comment box.