খুলনার মশিয়ালীতে তিনজনকে গুলি করে হত্যায় তিন আসামির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি||খুলনার খবর২৪
খুলনার খবর২৪|| গতকাল মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুস সামাদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিন আসামি।গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে জবানবন্দি দেন চার ভাইয়ের মধ্যে সেজো ভাই শেখ মিল্টন।এর আগে সোমবার (১৯ অক্টোবর) মেজো ভাই জাকারিয়া ও রেজওয়ান শেখ রাজু ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
জাকারিয়া ও রাজু মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমিরুল ইসলামের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক এনামুল হক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জবানবন্দিতে তারা জানান,ছোট ভাই জাফরিনকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা ও মসজিদ কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মিল শ্রমিক মুজিবরকে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ায় গুলি করে তিনজনকে হত্যা করেছেন বলে জানান খুলনার তিন ভাই।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,গত ৯ অক্টোবর চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডার মামলার মূল আসামি বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা শেখ জাকারিয়া, তার ভাই মিল্টন ও আরেক আসামি রেজওয়ান শেখ রাজুকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দীর্ঘদিন তারা পলাতক ছিলেন। এর মধ্যে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ।কিন্তু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্র ছিল অত্যাধুনিক। সেই অস্ত্র এখনও উদ্ধার করা হয়নি। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে আসামিদের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না হওয়া এবং হয়রানিমূলক মামলা দেয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, এপ্রিল মাসে একই মসজিদের মুয়াজ্জিনের বাড়িতে হামলা চালায় জাফরিন বাহিনী। সেই হামলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন জাফরিন। এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়।ঘটনার প্রতিশোধ নিতে স্থানীয় মিল শ্রমিক মুজিবরকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানো হলে এলাকাবাসী কারণ জানতে যায়। তখন এলাকাবাসীর ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে পালিয়ে যান তারা। মামলার মূল আসামিসহ এজাহারভুক্ত ২২ আসামির ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য গত ১৬ জুলাই মশিয়ালী এলাকায় তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর শেখ জাকারিয়া আত্মগোপনে যান। অনেকদিন চেষ্টার পর জাকারিয়াকে রাজধানী থেকে গ্রেফতার করা হয়।এরপর তিন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের হেফাজতে অবৈধ অস্ত্র আছে কি-না সে বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে বলেও জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
জানা যায়,মশিয়ালী গ্রামের একটি মসজিদ কমিটির মেয়াদ শেষ হলে সভাপতির পদ থেকে শেখ জাকরিয়াকে পদত্যাগ করতে বলে মিল শ্রমিক মুজিবরসহ মসজিদের মুসল্লিরা।সবার দাবির মুখে বাধ্য হয়ে পদ থেকে সরে দাঁড়াতে সম্মত হয়ে ১৭ জুলাই জুমার নামাজের পর পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এর আগে ১৬ জুলাই বিকেলে জাকারিয়া ও তার ভাইয়েরা অস্ত্র দিয়ে মিল শ্রমিক মুজিবরকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়।এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদী এলাকাবাসীর ওপর জাকারিয়া-জাফরিন-মিল্টন বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় মশিয়ালী গ্রামের মৃত বারিক শেখের ছেলে মো. নজরুল ইসলাম (৬০), একই এলাকার মো. ইউনুছ আলীর ছেলে গোলাম রসুল (৩০) এবং সাইদুল ইসলামের ছেলে আটরা মেট্রো টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সাইফুল ইসলাম (২২)।
একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন, আফসার শেখ, শামিম, রবি, খলিলুর রহমান ও মশিয়ার রহমানসহ বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অপরদিকে, বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে জাকারিয়ার চাচাতো ভাই জিহাদ শেখ নিহত হন। হত্যাকারী সন্দেহে কয়েকজনের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া জাকারকে দল থেকে বহিষ্কার করে খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগ।গত ১৮ জুলাই নিহত মো. সাইফুল ইসলামের বাবা মো. শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে খানজাহান আলী থানায় মামলা করেন।
No comments
please do not enter any spam link in the comment box.